Ashoke Mitra
অশোক মিত্র (১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ - ৯ জুলাই ১৯৯৯) একজন ভারতীয় দক্ষ প্রশাসক,ভারতের প্রথম জনগণনা কমিশনার, সমাজ বিজ্ঞানী, গবেষক, প্রাবন্ধিক, বিশিষ্ট শিল্প ঐতিহাসিক ও শিল্প সমালোচক।চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরবর্তী ন-বছর অবিভক্ত বাংলা ও পরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৫০ - ৫৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের লোকগণনার কাজ পরিচালনা করেন। এ কাজে তাঁর বিশ্লেষণ দক্ষতার ফলে ২৬ টি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। উপরন্তু ১৯৫৪ - ৫৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উন্নয়ন দুর্নীতিরোধ, শিল্প-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, সমবায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ও মৎস্য দপ্তরের সচিব হিসাবে কাজ করেছেন। অশোক মিত্র বিশিষ্ট পরিসংখ্যানবিদ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের লোকগণনার কাজে Sampling system বা নমুনা ব্যবস্থা বা পদ্ধতি'র সপক্ষে মত ব্যক্ত করেন এবং তিনি দিল্লীতে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম সেন্সাস কমিশনার নিযুক্ত হন এবং দশ বৎসর যথেষ্ট নিপুণতায় সেই পদে আসীন ছিলেন। জাতীয় জীবনের ২৬ দিক নিয়ে অনুসন্ধানে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে মোট ১৪৫০ টি রিপোর্ট প্রকাশ সম্পূর্ণ হয়। এরপর ১৯৬৫ - ৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিবের পদে কাজ করে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেন রাষ্ট্রপতির সচিব পদ থেকে। অশোক মিত্রের অভিজ্ঞতা একদিক থেকে এই শতাব্দীর ভারতের ইতিহাসের অংশ। গভীর অধ্যবসায়ে সেই মূল্যবান অভিজ্ঞতার দলিল লিখে রেখে গেছেন। 'তিন কুড়ি দশ' পাঁচ খণ্ডে সম্পূর্ণ তাঁর আত্মজীবনীমূলক এক রবীন্দ্র-পুরস্কারপ্রাপ্ত গ্রন্থ। তিনি বিষ্ণু দে, সমর সেন, সুশোভন সরকারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। এছাড়া যামিনী রায়ের অনুগামী তিনি ছিলেন চিত্রকলা বিষয়ে এশিয়ার প্রথম সারির বিশেষজ্ঞদের অন্যতম। তাঁরই প্রচেষ্টায় রুগ্ন প্রায় বাংলার বালুচরি শাড়ি তৈরির ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত হয়। বাঁকুড়ার পাঁচমুড়া গ্রামের পোড়ামাটির ঘোড়ার শিল্পসৌন্দর্যের ও ডোকরা কামারদের শিল্পকৃতির প্রচারে তাঁর অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চিত্রকলা নিয়ে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে লেখা 'ভারতের চিত্রকলা' ভারতীয় ভাষায় প্রথম ও প্রামাণিক গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত। অনুবাদক হিসাবে তাঁর দক্ষতা প্রমাণিত। ইংরাজীতে তাঁর অনূদিত 'চতুরঙ্গ', সমর সেনের 'বাবু বৃত্তান্ত' ও কমলকুমার মজুমদারের 'গোলাপ সুন্দরী' বিশেষভাবে প্রশংসিত।