শর্মিলা সিনড্রেলা
শর্মিলা সিনড্রেলা পেন্সিল। কম বেশি সবাই পেন্সিল দিয়ে লিখেছি। ছবি এঁকেছি। কখনাে বা অযথা দাগ টেনেছি খাতার পাতায়। কিন্তু অতি সাধারণ এই পেন্সিলকে স্বরূপে চিনতে ভুল করেননি দুজন বিজ্ঞানী। নােভােসেলভ আর গেইম। তারা কাগজে আঁক টেনে টেনে পেন্সিলের ভেতর থেকে খুঁজে বের করেন এক গুপ্তধন। অদৃশ্য কফিনে মােড়ানাে এক কণা- গ্রাফিন। এজন্য রাশিয়ান এই পদার্থবিজ্ঞানীদ্বয় ২০১০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নােবেল পেয়েছিলেন। শর্মিলার ভেতরও রয়েছে এমনই স্পৃহা। কেউ তা লক্ষ করুক বা না করুক। কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। বটে, পরিবারের কেউ অবশ্য ওর ভেতরের মানুষটাকে চিনতে পারেনি। নিজ আগ্রহেই মাধ্যমিকে ও বিজ্ঞান নিয়েছিল। রেজাল্ট ছিল নেহাতই গড়পরতা, ৩,৫৬। সবাই তাকে আশাহত করল । শেষে মন ভারি করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলাে মানবিকে। কিন্তু শর্মিলার ভেতর সুপ্ত প্রতিভার সূর্যছটা ঠিকই টের পেলেন ওর এক বন্ধু । চিঠিতে বন্ধুটি অভিবাদন জানাল শর্মিলাকে, আমার বিশ্বাস, তুমি কিন্তু এবার এ+ পাবে!’ সেই প্রথম উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নে বিভাের হলাে শর্মিলা। সবাইকে একরকম চমকে দিয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্টে। শিবগঞ্জ উপজেলায় মানবিকের মধ্যে সেরাদের তালিকায় ওর নাম! এরপরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া, প্রথম আলােয় লিখা কিংবা এরকম একটি বই বের হওয়া...। সে কি আর কারাে কোনাে বাধা মানবে? ও বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে গেল, স্রেফ পড়ালেখার জন্য! এখন স্বপ্নই ওর বাড়িঘর বােধ হয়, পড়া আর লেখাই ওর জীবন। ও খুব মিস করে মা বিচিত্রা রানীকে, নাম ছাড়া যার কোনাে স্মৃতিই তার নেই। বাবা জন পতি কুন্ডুর মুখটা সবসময় চোখের কোণে ভাসে। ওঁদের কোল জুড়েই তাে ১৯৮৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জন্মশাখ বেজেছিল শর্মিলার। আর একমাত্র দাদা সুমন কুন্ডু? শর্মিলার খুব শখ, 'দাদার সঙ্গে একটা ছবি তুলবে।