বিজ্ঞানরহস্য (ভাষাপ্রকাশ)

যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিকোণ থেকে রচিত বঙ্কিমের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রবন্ধ তকালীন শিক্ষিতমহলে ব্যাপক আলােড়ন সৃষ্টি করে। মানুষের ভেতর অনুসন্ধিৎসা জাগিয়ে তােলা এবং তাদেরকে চিন্তায় ও কর্মে যুক্তিশীল করে। তােলার অনন্য প্রয়াস এসব রচনা। সেই সময়ে পাশ্চাত্যে বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি এবং নতুন আবিষ্কারের সঙ্গে বাংলা ভাষার পাঠকদেরকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি। শুধু তাই নয়, পাশ্চাত্যের যেসব মনীষী ও বিজ্ঞানী চিন্তাজগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন তাঁদের সঙ্গেও ভারতবর্ষের শিক্ষিতমহলের সংযােগ স্থাপনের ক্ষেত্রে তিনি। পথিকতের ভূমিকা পালন করেছেন। বঙ্গদর্শন' পত্রিকায় বিজ্ঞানভিত্তিক যে প্রবন্ধগুলাে প্রকাশিত। হয়েছিল, পরবর্তীকালে তা ‘বিজ্ঞানরহস্য’ বই নামে প্রকাশিত হয়। এই অসাধারণ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুলাে লিখতে বঙ্কিমচন্দ্রের পাশ্চাত্য বইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে। প্রায় দেড়শাে বছর আগে দুর্লভ ইংরেজি বই নিষ্ঠার সঙ্গে পাঠ। করে তার সারাৎসার নিজের অতুলনীয় ভাষায় প্রকাশ। করেছিলেন তিনি। ‘বিজ্ঞানরহস্যের প্রধান অবদান পাশ্চাত্যে বিজ্ঞান ও বিশ্বজগৎ সম্পর্কে যে নতুন ধ্যান-ধারণা গড়ে উঠেছিল এর সঙ্গে শিক্ষিত বাঙালিদেরকে পরিচিত করিয়ে দেওয়া। সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, পরিমাণ-রহস্য, পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব তথা পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূবিদ্যা, জীববিদ্যা। সম্পর্কে বাংলা ভাষায় যে হৃদয়গ্রাহী আলােচনা সম্ভব সেটি বঙ্কিমচন্দ্রই প্রথম হাতে কলমে দেখিয়ে দেন। তার রচনাসূত্রেই এদেশের পাঠক জ্যোতির্বিদ ইয়ং , টিন্ডাল, হার্কট, স্পেনসার, বেয়ার, পল্টন, গিরার্ড, ডারউইন এর মতাে মনীষীদের গবেষণা ও কৃতিত্ব সম্পর্কে ধারণা অর্জন করে। বিজ্ঞান যে দর্শন এবং ধর্মশাস্ত্র থেকে স্বতন্ত্র এটি বিশ্লেষণ করে বঙ্কিমচন্দ্র শিক্ষিত বাঙালিদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা সঞ্চার করেছেন।