রামমোহন : অন্ধকারের উৎস হতে

রামমােহন রায় ছিলেন তার যুগের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের অন্যতম। তাঁর নিজের দেশে অথবা অন্যদেশেও তার সঙ্গে তুলনীয় ব্যক্তিত্ব এবং বহুমুখী কর্মকাণ্ডের নায়ক সহজে মেলে না। এই অসামান্য ব্যক্তিত্ব তিনি জন্মসূত্রে পান নি, তাকে আপন প্রচেষ্টায় অর্জন করতে হয়েছিল। দেশ এবং দেশের মানুষকে তিনি ভালবাসতেন; নিজের স্বাধীন বুদ্ধির প্রয়ােগ করে প্রাচীন ভারতীয় চিন্তার কোনাে কোনাে মূল্যবান দিককে তিনি যেমন নতুন করে দেশের এবং দশের কাছে উপস্থিত করেছিলেন, তেমনি ব্যাপক বিরােধিতাকে অগ্রাহ্য করে এদেশের সমাজব্যবস্থার যে সব দিক তার গহিত বা অন্যায় মনে হয়েছিল তার উচ্ছেদে নিজের সমস্ত শক্তিসামর্থ্য নিয়ােগ করেছিলেন। তিনি দেশকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করতে, সমকালের প্রবাহে অতীতকে পরিশ্রুত করতে, বহু ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে মাতৃভাষাকে চিন্তাশীল সাহিত্যের উপযােগী করার কঠিন দায়িত্বে অভিনিবিষ্ট হয়েছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় তার গ্রন্থ জার্মান অনুবাদে প্রকাশিত হয়, স্প্যানিশ রিপাবলিকানরা তাদের মডেল সংবিধান তাঁর নামে উৎসর্গ করে, দেশ বিদেশ থেকে বহু জ্ঞানীগুণী জন কলকাতা শহরে আসে তার সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ের উদ্দেশ্যে। উনিশ শতক জুড়ে এবং বিশ শতকের প্রথমার্ধে সংযুক্ত বাংলায় যে সাংস্কৃতিক নবজাগরণ ঘটে—বিদ্যাসাগর, মাইকেল, দীনবন্ধু, মহেন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ থেকে জগদীশচন্দ্র, সত্যেন্দ্রনাথ, হরপ্রসাদ, অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল, যামিনী রায়, উদয়শঙ্কর, বিভূতিভূষণ, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখ বহু প্রতিভা যে নবজাগরণের কুশীলব—রামমােহন তার পথকর্তা ও আদিপুরুষ।