সাহিত্যে মহামারি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

মহামারি মানব সভ্যতার সমান বয়সী। ফলে সাহিত্যেও আদিকাল থেকে মহামারির প্রতিফলন। রয়েছে। সফোক্লিসের আগে গ্রিক মহাকাব্য ‘ইলিয়াডে’ মহামারির কথা রয়েছে। সাড়ে তিন হাজার বছর আগে ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ ‘তােরাতেও মহামারির কথা আছে। বিশ্বসাহিত্যে মহামারির উপস্থিতি কম নয় । বাংলা সাহিত্যে মহামারি এক বিশেষ জায়গা জুড়ে আছে। বিশেষ করে মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য কলেরার দেবী ওলাইচণ্ডী ও বসন্তের দেবী শীতলাকে নিয়ে মঙ্গলকাব্য রচিত হয়েছে। আধুনিক কালের বাংলা সাহিত্যে মহামারি দুর্লক্ষ্য নয়। বঙ্কিম উপন্যাসেও মহামড়কের উল্লেখ আছে। বিশেষ করে ‘আনন্দমঠ'-এ দুর্ভিক্ষ ও মহামারির উপস্থিতি একই সঙ্গে । শরৎ-সাহিত্যের পাঠকমাত্রই মহামারি প্লেগ এসবের সঙ্গে পরিচিত আছেন। শরৎচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র সুরেশ প্লেগ আক্রান্ত অঞ্চলে মানুষের সেবা করতে গিয়ে নিজেই প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। শ্রীকান্ত' উপন্যাসেও দেখা যায় বার্মায় প্লেগের উপদ্রব, জাহাজযাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার খবর।। অবশ্য শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের কেন্দ্রে মহামারি নয়। মহামারি এসেছে ঘটনার প্রয়ােজনে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র ‘কাঁদো নদী কাঁদো' উপন্যাসটিকে এক ধরনের মহামারিসঞ্জাত উপন্যাস বললে ভুল হয় না। কামু ও সাত্রের ঘরানার এই প্রতিভাবান লেখক অস্তিত্ববাদি সংকট ও উত্তরণের নিমিত্তে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় এই উপন্যাসটি লিখেছিলেন। মানুষের কুসংস্কার, চেতনার বৈকল্য কিভাবে মহামারি আকারে একটি জনপদে দ্রুত ছড়িয়ে। পড়ে এই উপন্যাসটি তারই উদাহরণ। এই বইয়ের সকল রচনা মহামারি নিয়ে না হলেও প্রত্যেকটিতে রয়েছে নতুন চিন্তার সমাহার। এতে চিন্তার অনধিত দিক যেমন আছে তেমন রয়েছে জানা বিষয়ের অজানা পাঠ। মুক্তবুদ্ধি চর্চা, বিষয়ের গভীরে যাওয়ার ক্ষমতা, প্রশ্ন উত্থাপন এবং যুতসই ব্যাখ্যা হাজির করা মজিদ মাহমুদের প্রবন্ধের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আশা করি এই বই পাঠকের কৌতূহল কিঞ্চিৎ মেটাতে পারবে