এক ডজন পিয়ন

জীবন স্বভাবতই সম্মুখগামী । যাপিত জীবনের এই সম্মুখগতিই অতীতের জন্ম দেয় । মহাজাগতিক নিয়মে বর্তমানের এই সময় এবং সমান্তরালে থাকা অনুষঙ্গ এক সময় স্মৃতি হয়ে যায় । জীবনের বাঁকে বাঁকে সমান্তরালে চলা সেই অনুষঙ্গ ব্যক্তি বা বস্তু দুইরকমই হয়ে থাকে । আজকে যে মানুষকে ছাড়া আমার জীবন চলবে না বলে প্রত্যয় হয় সেই মানুষই। একদিন বিচ্ছিন্ন হয়, অতীত হয়ে যায়, বস্তু ও একই নিয়মে। অগ্রসরমান জীবনের গতির সাথে অসংগত হয়ে গ্রহণযােগ্যতা হারায়। এই প্রসঙ্গে মানুষের ক্ষেত্রটিই বেশি বিস্তৃত। কর্মজীবনের নানা পর্বে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সংস্পর্শে যেতে হয় আমাদের। যাপিত জীবনের সক্রিয় গতিটি সচল ও স্বাচ্ছন্দ্য রাখতে সেই মানুষগুলাে অবদান কম নয়। যদিও । অগ্রসরমান জীবনের নানাপর্বে মানষ পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। হয়ে পড়ে কিন্তু মানসপটে তাদের সংস্পর্শ-ভালােবাসা কিংবা ঘটে যাওয়া দ্বন্দ্ব-সংঘাত-অভিঘাত সবই চিত্রিত হয়ে থাকে । চলতে চলতে আমরা তাদের স্মরণ করি প্রসঙ্গক্রমে অথবা স্মৃতিরােমন্থন করে। সংবেদনশীল মানবিক মানুষ মনন ও আবেগের এক অদৃশ্য শক্তিতে বেশি বলীয়ান হয় বলে তারা। জীবনের সতত প্রবাহে সংস্পর্শে আসা সকল মানুষকেই স্মৃতিতে রাখে এবং তার সামান্য অবদানকেও স্বীকৃতি দিতে। তৎপর হয়। পদে-পদবিতে কিংবা অর্থবিত্তে বলীয়ান মানুষেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের সমগােত্রীয়দেও নিয়েই বেশি ভাবে। সুযােগ পেলে বা প্রসঙ্গক্রমে তাদেরই তুলে ধরার প্রয়াস পায় । অপেক্ষাকৃত অন্ত্যজ যারা তাদের জীবনের গতিকে সচল রাখার ক্ষেত্রে নিরন্তর প্রচেষ্টায় আন্তরিক তাদের কথা খুব বেশি বলতে শােনা যায় না। এক ডজন পিয়ন। শিরােনামের এই গ্রন্থটি এক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রমী সংযােজন। গ্রন্থের শিরােনাম দেখলেই বােঝা যায় গ্রন্থকার ড. নজরুল ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কোন খাতে প্রবাহিত হয়েছে। দীর্ঘ ২০। বছরের শিক্ষক হিসেবে তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে স্বচ্ছন্দে। কর্মপরিচালনার ক্ষেত্রে যাদের সহকারী হিসেবে পেয়েছেন। তাদের চিন্তা-চেতনা, কর্মে আন্তরিকতা বা অবহেলা, প্রেমভালােবাসা, জীবনদর্শন, কর্মপদ্ধতি, সততা ও নিষ্ঠা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেছেন এই গ্রন্থে। এই শ্রেণির পেশাজীবীদের। প্রতি লেখকের আন্তরিকতা এবং তার সরলভাষ্যে উপস্থাপনার কারিশমায় গ্রন্থটি পাঠকের কাছে অনবদ্য হয়ে উঠবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা বিশ্বাস করি, অনন্য বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক এই গ্রন্থটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি উৎসারণে অনুপ্রেরণা হিসেবে দূরগামী যাত্রার পথ উন্মুক্ত করবে।