লেনিনের 'রাষ্ট্র ও বিপ্লব' শত বছর পরের পাঠ, প্রশ্ন ও পর্যালোচনা

বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক চিন্তার ইতিহাসে বহুকাল যাবৎ ‘রাষ্ট্র প্রধান এক আলােচ্য বিষয়- বিশেষত পরিবর্তনবাদী মানুষদের কাছে। রাষ্ট্রের প্রকৃতি, সামাজিক রূপান্তরে রাষ্ট্রকে ব্যবহার কিংবা এর বিলােপের প্রশ্ন নিয়ে বিশ্বজুড়েই বিতর্ক হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যবহারিক দিক থেকে পরিবর্তনবাদী চিন্তা ও তৎপরতার জন্য এটা ঐতিহাসিক এক স্পর্শকাতর প্রশ্নও বটে- রাষ্ট্রপ্রশ্নকে সে কীভাবে মােকাবেলা করছে বা করবে। আবার এটা যে কেবল বিপ্লবী রাজনীতির মৌলিক প্রশ্ন আকারে হাজির আছে, কিংবা শুধুই উত্তাল রূপান্তরবাদী আন্দোলনকারীদের বিতর্কের নিশ্চয়ই লেনিন কোনাে বােকা বুড়াে ছিলেন না। কিন্তু ১৯৪৫-এর ১২ জুন মাও জেদং বিখ্যাত সেই বক্তৃতায় চীনে তার সহযােগীদের এই মর্মে যে ‘বােকা বুড়াের গল্প বলে অনুপ্রাণিত করেছিলেন লেনিন যেন তার রুশ তরুণ প্রতীক ছিলেন। মাওয়ের চীনা উপকথার বােকা বুড়াে বাড়ির সামনের দক্ষিণমুখী পথ পরিষ্কার করতে দুটি পাহাড় সরানাের লক্ষ্যে সেগুলাে কোদাল দিয়ে কাটা শুরু করে। এই দেখে প্রতিবেশীরা বুড়ােকে নিয়ে হাসত। তারপরও বুড়াে প্রতিদিন পাহাড় কাটে আর বলে, প্রয়ােজনে আমার বংশধররা প্রজন্মের পর প্রজন্ম এইভাবে কেটে চলবে। আমরা যতটুকু কাটব পাহাড় দুটি ততটুকুই ছােট হয়ে যাবে । বুড়াের এইরকম প্রতিজ্ঞা দেখে একদিন ঈশ্বর তাঁর প্রতিনিধি পাঠিয়ে পীঠে করে পাহাড় দুটো সরিয়ে নেয়। | চীনের এই উপকথার মর্মটুকু হলাে অধ্যবসায়ের দৃঢ়তা থাকলে পাহাড়ও সরানাে যায়। বিশ্বে পরিবর্তনবাদী রাজনীতির ইতিহাসে এইরূপ ‘বােকা বুড়াে অনেক ছিলেন। লেনিন তাদের মাঝে নিশ্চয়ই বিশেষ একজন। যিনি প্রথম পুঁজিতান্ত্রিক শােষণ ও বঞ্চনার শৃঙ্খল ভাঙার কাজকে অবিশ্বাস্য এক বাস্তবে পরিণত করেছিলেন এবং তাঁর অধ্যবসায়ের রূপ-রসগন্ধ সবচেয়ে বাঙময় হয়ে উঠেছিল তারই লেখা 'রাষ্ট্র ও বিপ্লব’-এ। এইরূপ বিবেচনা থেকেই এখানে মাও জেদংয়ের উদ্ধৃতিটি ব্যবহৃত হলাে।