সুফির দেলকোরান ২

“দেলকোরান না জানিলে দলিলকোরান পড়লে কিছু হবে ” বলে ফকির লালন শাহ্ বাঙালিকে সাবধান করেছেন দুশাে বছর আগে। তিনি যা বলেন যা করেন সবই জীবন্ত ও জাগ্রত কোরান। এমন মহান পুরুষকেই বলা হয়। ‘কোরানুন নাতেক' অর্থাৎ বাঙ্ময় কোরান বা মূর্ত একজন দেলকোরান। ‘আত্মতত্ত্বে ফাজেল’ তথা আত্মতত্ত্ববিদ বা ধর্মজ্ঞানী বলেই সব ধর্মের উপর তিনি সদা ভাসমান ‘লা’ শরিক ধর্ম নিরপেক্ষ মহাসত্তা। অথচ আমরা তাঁর মতাে আত্মত্যাগী মহাপুরুষদের কাছে সমর্পিত হয়ে আপনাপন দেলপাঠ না শিখে বাহ্যবিদ্যার চাপে পড়ে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছি। বিদ নেই, বিহিত নেই, বই পড়ে পড়ে আমরা মস্ত বড় বিদ্যার জাহাজে পরিণত হচ্ছি। বিদ’ অর্থ জ্ঞানী এবং যার জ্ঞান ‘হিতের সহিত বর্তমান বা বিশেষ হিতকর সেটাই ‘বিহিত। বিদ বিহিতের হিতাহিত বােধ হলাে না বলে জ্ঞানযােগে নিজের চেষ্টায় নিজেকে এখনও কিন্তু পাঠ করার পথই খুঁজে পাই না। অথচ লােকদের কাছে। জ্ঞানীর তমা পেয়ে অহঙ্কারে জ্ঞানহারা হয়ে পড়ি আরও। ভারি বইপত্র পড়ে যারা নিজেদের মস্ত বড় জ্ঞানী-পণ্ডিত ভেবে বসি তা কতটা কী জ্ঞান সে নিয়ে কুতর্কের দোকানদারী করা সুফির কাজ নয়। মুদ্রণযন্ত্রের ইতিহাস খুব সাম্প্রতিক কালের। ছাপাখানায় মুদ্রিত কাগজের বইয়ের ঐতিহ্য দুশাে বছরের বেশি বৈ তাে নয়। তাহলে দুশাে বছর আগে যখন ছাপানাে বইপত্র বলতেই ছিলই না তখন কি মানুষ জ্ঞানচর্চা করেনি? রাম, কৃষ্ণ, মহাবীর, বুদ্ধ, নূহ, দাউদ, মুসা, ঈসা, মােহাম্মদ, আলী, হােসাইন সহ সিদ্ধপুরুষগণ যে মহাজ্ঞানের অর্জন করলেন এবং অজ্ঞান মানবসমাজকে মুক্তির ধর্মতত্ত্ব শিক্ষা দিলেন তা কোনও প্রাতিষ্ঠানিক কাগুজে লেখাপড়ার ফসল নয়, সম্পূর্ণ আত্মদর্শনের ফলশ্রুতি। সে অভিব্যক্তিই পুনর্ব্যক্ত হয়েছে সুফির এ মুক্ত দেল কোরানে। সুফিবিশ্বের গৌরব ও মহান ধর্মবিজ্ঞানী সদর উদ্দিন আহমদ চিশতীর প্রখ্যাত শিষ্য ও জগতসিদ্ধ অদ্বিতীয়