নদী ও পাটনির ছেঁড়া পর্চা

আবহমান বাংলার বয়ে যাওয়া জীবনপ্রবাহে মিশে আছে নদী। নদীমাতৃক এ দেশে অনাদিকাল থেকে খেয়া হলাে গমনাগমনের চিরায়ত মাধ্যম। এই খেয়া পারাপারের সূত্রে গ্রাম্য জনজীবনে জাগে সাড়া। হাট, মেলা জমে ওঠার খবর ছড়িয়ে পড়ে খেয়াঘাট থেকে বিস্তীর্ণ প্রান্তরে। একসময় দূর-দূরান্তে যাতায়াতের জন্য কদর ছিল পাটনিদের। রাত বিরাতে খেয়া পারাপারে সকলেরই নির্ভরতা ছিল পাটনিদের উপর। কালের ধারাবাহিকতায় গ্রামগঞ্জেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বিবর্তিত জীবনযাত্রায় একদিকে যেমন মরছে নদী অপরদিকে নদীতে নদীতে গড়ে উঠছে সেতু। এখন অধিকাংশ নদী মরে যাওয়ায় পাটনিরা কোথায় যাচ্ছে, কোন পেশা বেছে নিচ্ছে তার হদিশ কেউ রাখে। কোনাে কোনাে মরা নদীর পাশে মরার মতাে পড়ে থাকছে পাটনিরা। আধুনিকতা কেড়ে নিয়েছে এদের বৈচিত্রময় আনন্দপূর্ণ জীবন-জীবিকা। পাটনি-ঘাটেলদের সেকাল-একালের সুখ-দুঃখের কড়চাই এ উপন্যাসের বিষয়। কাহিনি বর্ণনার সাবলীলতা এবং সকল কৃত্রিমতা ছাপিয়ে কথাসাহিত্যিক অসিত বিশ্বাস এ উপন্যাসটিতে তার অসামান্য প্রতিভার স্ফুরণ ঘটিয়েছেন। বিষয় নির্বাচনে, ঘটনা পরম্পরায় এটি হয়ে উঠেছে মূলধারার সার্থক উপন্যাস। একটি বিশেষ পেশাজীবী শ্রেণির এমন অনুপুঙ্খ বিবরণ সাহিত্যের মূলধারাকেই ছুঁয়ে যায়। নিঃসন্দেহে গ্রন্থটির সাহিত্যমূল্য ঈর্ষণীয়। এমন একটি গ্রন্থ পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ায় সাধুবাদ জানাই অনুভব প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কবি তুষার প্রসূনকে।