শামসুর রাহমানের কবিতায় সমাজ ও রাজনীতি

‘মধ্যপথে কেড়েছেন মন/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নন, সম্মিলিত তিরিশের কবি। —ত্রিশের উত্তরাধিকারকে বহন করে শামসুর রাহমান হয়ে। ওঠেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবিকণ্ঠ। প্রথম দিকে অন্তর্জগতে সমর্পিত এ কবি। সমাজ-সমকালের উত্তাপ এবং রাজনৈতিক বিক্ষুব্ধতার প্রভাব খুব কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন। তার কবিতায়। নিজ বাসভূমে (১৯৭০) থেকে তিনি সরাসরি বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের রক্তাক্ত জন্ম-ইতিহাসের প্রতিটি স্তর থেকে তার কাব্য-উপকরণ সংগ্রহ করতে শুরু করেন—বেরিয়ে আসেন নির্জনতা থেকে সমাজ-সমকালের কোলাহলে—ঝাবিক্ষুব্ধ-স্লোগানমুখর কবিতার। পথে এবং মৃত্যুপূর্ব পর্যন্ত কণ্ঠ মিলিয়েছেন। স্লোগানে-মিছিলে কোনাে রাজনৈতিক দলের অংশী হয়েই। শামসুর রাহমানের কবিতায় সমাজ ও রাজনীতি গ্রন্থে কবির এই উত্তরণের পথ এবং এর বিচিত্র রূপ ও রূপান্তর সহজবােধ্য অথচ সংহত ভাষায় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেন তানভীর দুলাল। একজন শামসুর রাহমানের ব্যক্তিজীবনের পরিলেখের সঙ্গে কবি হয়ে ওঠার দায় ও দ্রোহ এবং চর্যাপদ থেকে বর্তমান পর্যন্ত কবিতায় সমাজ ও রাজনীতিচেতনার ঐতিহাসিকসূত্রটি যেভাবে ধরিয়ে দেন, তা আমাদের শামসুর রাহমানের সমাজচিন্তা। ও রাজনীতিভাবনার স্বাতন্ত্রকে সহজে বােধগম্য করে তােলে। শামসুর রাহমানের কবিতায় সমাজ। ও রাজনীতির স্বরূপ অনুধ্যানে গবেষক নিবিড় এবং অনুপুঙ্খ-পাঠকে বিশ্লেষণ করেন নির্মোহ দৃষ্টিতে শামসুর রাহমানের কবিতার প্রকরণ-প্রসিদ্ধি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গবেষক কোনােভাবেই লক্ষভ্রষ্ট হন না। সমাজ ও রাজনীতিচেতনার সঙ্গে সম্পর্কিত ছন্দ-কাব্যালঙ্কার ও অন্যান্য উপকণের উদাহরণ। সন্নিবেশন এবং ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এ গ্রন্থের মৌল উপজীব্যকে আরও স্পষ্ট করে তােলে। বিগত একযুগে শামসুর রাহমান-অনুসন্ধিৎসুদের কাছে এ! গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে একটি পরীক্ষিত ও নির্ভরযােগ্য আশ্রয়। শামসুর রাহমানের কাব্যপাঠক ও গবেষকদের প্রয়ােজনে গ্রন্থটির পরিমার্জিত সংস্করণ ছিলাে তাই সময়ের দাবি।