কথা লেখা কথা

তিনি কথাশিল্পী । বাংলা গদি। আশ্চর্য সুষমায় স্পন্দিত হয়ে ওঠে তার কথায় । শাণিত অথচ নমনীয়, ভেতর ইস্পাতের শক গাঙ্গুনি, বাইরে। সতেজ সবুজ কুমড়ােলতার লাবণ্য, নির্ভার নিমেদ, কিন্তু ভাবনাকে টেনে নিয়ে যায় অনেক পূর, হৰি আঁকে- চোখের সামনে মা তার, চোখের পেছনে মাথার ভেতরে যে ছাপ পড়ে, তারও, অথচ সােজাসুজি তুলে ধরা ভণিত্রী। নেই, আড়পর নেই, পাতিহার আস্ফালন নেই, তবু দেখায়, যত দেখায়, তার চেয়ে ভাবায় বেশি, যন্ত্র শুণিয়া, এতই আবিষ্ট করে তার মনে ঢোকানাে মোহিনী মায়ায় এই হলাে তার স্বাদের এখা- হাসান আজিজুল হক-এর, এবং এখানে গল্প ছেড়ে প্রবন্ধেই তার আশ্রয়, যে প্রবন্ধ স্বয়ং আবার প্রথার সীমানা ভেঙে মুখে কথাঝে লেখার কথার প্রতিদ্বন্দ্বী করে তােলে। তারা পাশাপাশি হাজির হয়। একগুচ্ছ তেমন কথার অর লেখা উপহার এই বই। লেখা গান আগে পিছে মুখে বলা কথার আলালী, মাদ- এবং আলাদা মজা। শ্রোতাকে সামনে বসিয়ে তার সঙ্গে কথা বলায় যােগাযোগের দূরত্ব আরো কম, চিন্তা ও কথায় মাঝখানে ব্যবধান আত্ৰ নেই । ভাষায় কৃত্রিম সাপােশাক সব খসে পড়ে। মেধার নির্মাণ। সরাসরি সামনে চলে আসে। হাসান আজিজুল হক-এর এই সব কথা পাঠকের বিরল পানা । একই সঙ্গে ঘরে বসে ভেবেচিন্তে লেখা রচনাও সে পায়। দুই এর তফাতে চোখে পড়ে তার পোৱা দুটো রূপ, মলিও মূলত এক! অসাধারণ এক উপরি লা তার জোটে। তার চিন্তার ক্ষেত্র এখানে ছড়ানাে, ছিটানাে, বিস্তৃত | বঙ্কিম, তারাশঙ্কর, শিবরাম, নজরুল, আবুল ফল থেকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, নাজিম মাহমুদ হয়ে মানবমুক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, শিক্ষা, চলচ্চিত্র, সব কিছুই তার ভাবনার বিষয়। কত অনায়াসে তিনি গভীরে যান, অবলীলায় মূল প্রশ্নগুলাে সামনে তুলে আনেন, তার দেখাতে এবং কথাতেও, আমরা অবাক হই। মানবিক শ্রোচেতনার সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন মননশীলতা তার জীবনাবনা] জীবনযাপনে জীবনস্বপ্নে মেশে। মেলে তার সাহিত্য-শিল্পের আন্দোগণেও। কথা। লেখা কথা এসবেরই স্বতস্ফূর্ত অকপট প্রকাশ।