মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে বাংলা

সময়টা অষ্টাদশ শতকের আরম্ভ। কিন্তু ইতােমধ্যে দেখা দিয়েছে মুঘল সাম্রাজ্যের ভগ্নদশা। বৃদ্ধ সম্রাট আওরঙ্গ জেব এক ভ্রান্ত সাম্রাজ্যবাদী জেদ নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে দাক্ষিণাত্যে তরুণ মারাঠা শক্তির বিরুদ্ধে নিশ্চিত ব্যর্থতার লড়াইতে ব্যস্ত। উত্তর ভারতে রাজধানী দিল্লীর কেন্দ্রস্থল থেকে তিনি দীর্ঘকাল অনুপস্থিত। স্বাভাবিকভাবে এর সুযােগ নিয়ে একদিকে যেমন আত্মপ্রকাশ করছে। রাষ্ট্রের সংহতিবিরােধী আভ্যন্তরীণ শক্তিগুলি তেমনই অন্যদিকে বিদেশি বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলি ক্রমান্বয়ে অন্যায়জনক চাপ সৃষ্টি করে চলেছে প্রশাসনের উপর, সুবা বাংলা এর ব্যতিক্রম ছিল না। দেশের এমনই এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে বাংলার দেওয়ান হয়ে (পরবর্তী সময়ে সুবাদার) এলেন মুর্শিদকুলি খাঁ। তিনি শাসন ক্ষমতায় ছিলেন প্রায় সাতাশ বছর (১৭০০-১৭২৭)। মুর্শিদকুলি খাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল দিল্লীর কাছে নামমাত্র আনুগত্য বজায় রেখে—অকারণ সংঘর্ষের পক্ষপাতী ছিলেন না। কীভাবে সুবা বাংলাকে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র শাসনের মর্যাদা প্রদান করা যায়। এ কারণে মুঘল সম্রাট প্রদত্ত বিদেশী বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলির নানা সুবিধাকেও খর্ব করতে তিনি এতটুকু দ্বিধা করেননি। বস্তুত এসময়ের বাংলা ও বাঙালির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবন–যা সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক কলুষতা মুক্ত ছিল মুর্শিদকুলি খাঁর শাসনকালকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। বর্তমান গ্রন্থটিতে উপরােক্ত চিত্রটিকেই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে সমসাময়িক তথ্যাবলীর উপর ভিত্তি করে।