অগ্নিমঙ্গল

যুবকের জন্ম হয়েছিল, সুদূর আফগানিস্তানের উষর মরু প্রান্তরে। গাধার পিঠে মাল চাপিয়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া ছিল ওঁর পেশা। নিয়তির আশ্চর্য খেয়ালে রীতিমতাে মুটে মজুরি করে জীবিকার দাসত্ব করে বেড়ানাে সেই যুবক এখন। হিন্দুস্তানের পূর্বভাগে সবচাইতে ক্ষমতাধর এক নৃপতি। উত্তরে উত্তর বঙ্গের কোটিবর্ষ-পুনর্ভবা-করতােয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণে রাঢ় দেশের ময়ুরাক্ষী-অজয়-দামােদর অবধি তাঁর। বিস্তৃতি। বঙ্গ দেশে মুসলিম রাজশাসন প্রতিষ্ঠার প্রথম এক শ বছরের প্রেক্ষাপট নিয়ে রচিত অগ্নি-ট্রিলজির দ্বিতীয় গল্পটি হচ্ছে। অগ্নিমঙ্গল। ইতিহাসের বিস্ময় যুবক ইওজ খলজির নাম দিয়ে শুরু হলেও এই গল্পের মূল নায়ক হচ্ছে সময়। রঙ্গমঞ্চ হচ্ছে সমগ্র বঙ্গভূমি এবং তৎসংলগ্ন ভারতবর্ষ! আত্রাই তীরের পরিত্যক্ত রাজপুত্র নরুনকে মনে আছে? সুখ ও সমৃদ্ধির উত্তুঙ্গ বাসনা বুকে নিয়ে একদা পথে নেমেছিল সে। অগ্নিমঙ্গলের পথে পথে যেতে যেতে নরুনের সাথেও দেখা হবে আমাদের। শুনতে হবে শ্রাব্য ও অশ্রাব্য সব কাহিনী । স্থলিত বসনা উদ্ভিন্নযৌবনা সেই-সে প্রেয়সীদের বাহুলগ্ন হয়ে পান। করতে হবে (আকণ্ঠ!) আসন্তে মধু খ্যাত ‘রতিফলমদ্য!' দেখা হবে, পঞ্চম হিসেবে পরিত্যাজ্য একটি বর্বর দস্যু দলের সঙ্গে। করতােয়া নদীতটস্থ শাপভ্রষ্ট দেবতা দেবু এবং তার প্রিয়তম সঙ্গিনী সুগন্ধার সঙ্গে। আর এতকিছুর পরেও, অগ্নিমঙ্গল উপন্যাসে খুব সম্ভবত ইওজের চাইতেও বড় বিস্ময়ের দাবি রাখে স্বাধীন ও সুবিশাল সেন-শাসিত বঙ্গ রাজ্যের অস্তিত্ব। বঙ্গ বিজেতা হিসেবে সুখ্যাত বখতিয়ার খলজির মৃত্যুর দেড়যুগ পরেও আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনির্বাণ সেই সেন। রাজ্যের উত্তর অংশের সীমান্ত রক্ষক হিসেবে অতন্দ্র প্রহরীর মতাে উদ্ধত অস্ত্র বাগিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রমাদেব এবং রুদ্রদেবসেন নামক আতঙ্কজাগানিয়া একটি শক্তিচক্র। চক্রটি ক্রমে-ক্রমে এতই শক্তিমান হয়ে উঠছিল যে, সুবিশাল নৌবহর নিয়ে মুসলিম রাজ্যের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে রাজ কিংবা নৈরাজ্য চালাতেও ভয় পাচ্ছিল না। লখনৌতির সিংহাসনে আরােহণের পর থেকে তুর্কী তরুণ। ইওজের একমাত্র স্বপ্ন ছিল বখতিয়ারের অসমাপ্ত বিজয়কার্যটি সম্পন্ন করা। সমগ্র বঙ্গ দেশ জয় করে লখনৌতির মুসলিম রাজ্যটিকে বাংলা দেশের মুসলিম রাজ্য হিসেবে গড়ে তােলা। কিন্তু বাস্তবে তা কতখানি সম্ভব? প্রেম ও যুদ্ধদিনের গল্প অগ্নিমঙ্গল। প্রেম এখানে আদিম, অনাবৃত, অসংযত। যুদ্ধ এখানে অমােঘ । অবিশ্রা